মধ্যরাত্রির কাছাকাছি সময়ে ইংরেজ অফিসারদের হুকুমে সব লাশ আলাদা করা হলো। কয়েকটা লাশ সরানো পর এক ইংরেজ সিপাহী একটি লাশের বাহু ধরে টানবার চেষ্টা করলে তার হাতে একটা শক্ত চাপ অনুুভূত হয়। তার সাথে সাথেই লাশের মাথা থেকে পাগড়ি খুলে পড়লো এবং লম্বা লম্বা কালো চুল ছড়িয়ে পড়লো।ইংরেজ সিপাহী ইংরেজী ভাষায় কিছু বলে তার অফিসারের দৃষ্টি আর্কষণ করলো। তারা মশাল এনে দেখলো, এক যুবতী। তার বাহুর এক সোনার কাঁকন চকমক করছে। তারপর অার একটি নারীর লাশ পাওয়া গেলো। তার সারা শরীর গুলীর আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। পূর্ণিয়া (এক বিশ্বাসঘাতক) সিপাহীর হাত থেকে মশাল নিয়ে ভালো করে তার মুখ দেখে নিশ্চল হয়ে দাড়িয়ে থাকলো।
এক ইংরেজ প্রশ্ন করলো, আপনি তাকে চিনেন ?
পূর্ণিয়া জানালো, এ একটি এতিম হিন্দু মেয়ে।মেয়েটির বাবা মারা যাওয়ার পর সুলতান তাকে নিজের মেয়ে বানিয়ে রেখেছিলেন।কিছুক্ষণ পর সকল লাশ সরানো হলে সবাই মোহাচ্ছন্নের মতো তাকিয়ে রইলেন শেরে মহীশূরের দিকে।
হযরত টিপু সুলতান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লেবাস রক্তে রঙিন হয়ে গেছে, কিন্তু উনার মুখের গুরুগম্ভীর মহিমাময় রূপের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। উনার লেবাস ফউজী অফিসারদের থেকে আলাদা নয়। যে পাগড়ি উনাকে অপরের থেকে আলাদা করতো , তা পড়ে রয়েছে কয়ক কদম দূরে।
এরপর নতুন করে শুরু হল লটপাট, হত্যা ও ধ্বংস-তান্ডব।যে কওমের কতক মা মীর সাদিকের মতো গাদ্দারদের স্তন্য দিয়ে পালন করেছিলো, সৃষ্টিকর্তা সে কওমের নারীর অার্তচিৎকার কর্ণপাত করলেন না।সেরিংগাপটেমের কোন ঘর হিংস্র বর্বরতার তুফান থেকে নিরাপদ থাকলো না। এমনকি যেসব গাদ্দার মীর সাদিক , পূর্ণিয়া, কামরুদ্দীন,মঈনুদ্দীন এর মতো বিবেকহীনদের সহযোগীতা করেছিলো, তারাও অনুভব করতে লাগলো যে, তারা শুধু কওমের আযাদী ও শহীদানের মূল্যই উসূল করেনি, স্ত্রী- কণ্যাদের ইযযতের সওদা-ও করেছে।