বিশ্বখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফখরুল আউলিয়া ওয়াল মাশায়িখ, শাইখুল ইসলাম হযরত ইমাম আল্লামা আবুল ফারাজ নূরুদ্দীন আলী ইবনে ইবরাহীম ইবনে আহমদ ইবনে ‘আলী ইবনে ‘উমর হালাবী মিছরী ক্বাহিরী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি হযরত আলী নূরুদ্দীন ইবনে বুরহানুদ্দীন হালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হিসেবে সকলের মাঝে মাশহূর (বিছাল শরীফ : ১০৪৪ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত সীরাতগ্রন্থ ‘ইনসানুল ‘উয়ূন ফী সীরাতিল আমীনিল মা’মূন’ (যা আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ শরীফ হিসেবে পরিচিত) উনার মধ্যে এবং হযরত শায়েখ ইমাম আল্লামা মাওলা আবুল ফিদা ইসমাঈল হাক্কী ইবনে মুছ্ত্বফা ইস্তাম্বুলী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ১১২৭ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে রূহুল বায়ান শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন-
اَوَّلُ مَنْ اَحْدَثَهٗ مِنَ الْـمُلُوْكِ صَاحِبُ اِرْبِلَ وَصَنَّفَ لَهٗ حَضْرَتْ اِبْنُ دِحْيَةَ رَحِـمَهُ اللهُ كِتَابًا فِـى الْـمَوْلِدِ سَـمَّاهُ التَّنْوِيْرُ بِـمَوْلِدِ الْبَشِيْـرِ النَّذِيْرِ فَاَجَازَهٗ بِاَلْفِ دِيْنَارٍ وَّقَدِ اسْتَخْرَجَ لَهُ الْـحَافِظُ ابْنُ حَجَرٍ اَصْلًا مِّنَ السُّنَّةِ وَكَذَا الْـحَافِظُ السُّيُوْطِـىُّ وَرَدَّا عَلَى الْفَاكِهَانِـىِّ الْـمَالِكِىِّ.
অর্থ: “বাদশাহগণের মধ্যে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন ইরবিলের বাদশাহ হযরত মালিক মুযাফ্ফার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। হযরত ইমাম আল্লামা হাফিযুল কাবীর আবুল খত্ত্বাব উমর ইবনে দিহ্ইয়াহ কালবী দানী সাব্তী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাদশাহ্ উনার আমলে উৎসাহ প্রদান করার উদ্দেশ্যে উনার জন্য ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ উনার উপর একখানা কিতাব রচনা করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি কিতাবখানার নামকরণ করেন ‘আত তানভীর বি মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর’। বাদশাহ এজন্য উনাকে এক হাজার দীনার (বর্তমানে তা প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা) হাদিয়া দেন। হযরত আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসকলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার ভিত্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ করেছেন এবং অনুরূপ প্রমাণ পেশ করেছেন ১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনারা উভয়ই তাজুদ্দীন ফাকিহানী মালিকীর মতবাদ খ-ন করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ শরীফ ১/১২৪, তাফসীরে রূহুল বায়ান ৯/৪৭)
আল্লামা মুহম্মদ ইবনে ইঊসুফ ছালিহী শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قُلْتُ وَاَوَّلُ مَنْ اَحْدَثَ ذٰلِكَ مِنَ الْـمُلُوْكِ صَاحِبُ اِرْبِلَ الْـمَلِكُ الْـمُظَفَّرُ اَبُوْ سَعِيْدٍ كُوْكُوْبُرِىُّ بْنُ زَيْنِ الدِّيْنِ عَلِىِّ بْنِ بَكْتَكِيْـنَ اَحَدُ الْـمُلُوْكِ الْاَمْـجَادِ وَالْكُبَـرَاءِ الْاَجْوَادِ.
অর্থ: “আমি বলি, বাদশাহগণের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন, তিনি হচ্ছেন ইরবিলের বাদশাহ হযরত মালিক মুযাফ্ফার আবূ সাঈদ কূকূবুরী ইবনে যাইনুদ্দীন আলী ইবনে বাক্তাকীন রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ছিলেন মহামর্যাদাবান বাদশাহগণ উনাদের একজন এবং বিখ্যাত দানবীর ব্যক্তিবর্গ উনাদের অন্যতম।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ‘ইবাদ ১/৩৬২)
হযরত আল্লামা আবুল আব্বাস শামসুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে আবী বকর ইবনে খাল্লিকান বার্মাকী ইরবিলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৬৮১ হিজরী শরীফ) যিনি সকলের মাঝে হযরত আল্লামা ইবনে খাল্লিকান রহমতুল্লাহি আলাইহি হিসেবে প্রসিদ্ধ, তিনি বলেন-
كَانَ كَرِيْـمَ الْاَخْلَاقِ كَثِيْـرَ التَّوَاضُعِ حُسْنَ الْعَقِيْدَةِ سَالِـمَ الْبِطَانَةِ شَدِيْدَ الْـمَيْلِ اِلـٰى اَهْلِ السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ
অর্থ: “ইরবিলের বাদশাহ হযরত মালিক মুযাফ্ফার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, অত্যধিক বিনয়ী। উনার আক্বীদা ছিলো অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং অনন্তকরণ ছিলো অতি পবিত্র। তিনি ছিলেন আহলু সুন্নত ওয়াল জামা‘য়াত উনার একনিষ্ঠ অনুসারী।” সুবহানাল্লাহ! (ওয়াফাইয়াতুল আ’ইয়ান ওয়া আম্বায়ি আবনায়িয যামান)
হযরত আল্লামা ইবনে খাল্লিকান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন-
وَاَمَّا اِحْتِفَالُهٗ بِـمَوْلِدِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِنَّ الْوَصْفَ يَرْقُصُ عَنِ الْاِحَاطَةِ بِهٖ لٰكِنْ نَذْكُرُ طَرْفًا مِّنْهُ وَهُوَ اَنَّ اَهْلَ الْبِلَادِ كَانُوْا قَدْ سَـمِعُوْا بِـحُسْنِ اِعْتِقَادِهٖ فِيْهِ فَكَانَ فِـىْ كُلِّ سَنَةٍ يَّصِلُ اِلَيْهِ مِنَ الْبِلَادِ الْقَرِيْبَةِ مِنْ اِرْبِلَ مِثْلُ بَغْدَادُ وَالْـمَوْصِلُ وَالْـجَزِيْرَةُ وَسِنْجَارُ وَنُصَـيْـبِـيْـنُ وَبِلَادِ الْعَجَمِ وَتِلْكَ النَّوَاحِىْ خَلْقٌ كَثِيْرٌ مِّنَ الْفُقَهَاءِ وَالصُّوْفِيَّةِ وَالْوُعَّاظِ وَالْقُرَّاءِ وَالشُّعَرَاءِ وَلَا يَزَالُوْنَ يَتَوَاصَلُوْنَ مِنَ الْـمُحَرَّمِ اِلـٰى اَوَائِلِ شَهْرِ رَبِيْعِ ۣ الْاَوَّلِ.
অর্থ: “ইরবিলের বাদশাহ হযরত মালিক মুযাফফার রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্তৃক আয়োজিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ছানা-ছিফত বর্ণনা করে শেষ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তারপরেও একটি বিষয় আলোচনা না করলেই নয়। আর তা হলো- নিশ্চয়ই দেশবাসী উনার বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলো। যার কারণে প্রতি বছর ইরবিলের নিকটবর্তী সকল দেশ, যেমন- বাগদাদ, মাওছিল, জাযীরাহ, সিনজার, নুছাইবীন, অনারব এবং নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে অসংখ্য ফক্বীহ-মুফতী, ছূফী-বুযূর্গ, ওয়ায়িজ, ক্বারী ও শায়িরগণ (হামদ শরীফ ও না’ত শরীফ লেখক ও পাঠকগণ) উক্ত মহাসম্মানিত মাহফিল মুবারক-এ উপস্থিত হতেন। সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ মাস থেকে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাস উনার প্রথম দিক পর্যন্ত এই আগমনের ধারা অব্যাহত থাকতো।” সুবহানাল্লাহ! (ওয়াফাইয়াতুল আ’ইয়ান ওয়া আম্বায়ি আবনায়িয যামান)
শামসুদ্দীন আবূ মুযাফফার ইঊসুফ ইবনে ক্বিযঊগিলী ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ : ৫৮১ হিজরী শরীফ, বিছাল শরীফ : ৬৫৪ হিজরী শরীফ) যিনি সিব্তু ইবনে জাওযী তথা আল্লামা ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৌহিত্র হিসেবে পরিচিত, তিনি বলেন-
كَانَ يَعْمَلُ فِـىْ كُلِّ سَنَةٍ مَوْلِدَ النَّبـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ رَبِيْعِ ۣ الْاَوَّلِ يَـجْتَمِعُ فِيْهِ اَهْلُ الدُّنْيَا وَمِنْ وَّرَاءِ جَيْحُوْنَ الْعُلَمَاءُ وَالْفُقَهَاءُ وَالْوُّعَّاظُ وَالْقُرَّاءُ وَالصُّوْفِيَّةُ وَالْفُقَرَاءُ وَمِنْ كُلِّ صِنْفٍ.
অর্থ: “হযরত মালিক মুযাফফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি বৎসর সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়ারহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার ইন্তেযাম মুবারক করতেন। উক্ত ‘আযীমুশ শান মহাসম্মানিত মাহফিল মুবারক-এ বিশ্ববাসী উপস্থিত হতো। অর্থাৎ সারা বিশ্ব থেকে মুসলমানগণ উক্ত ‘আযীমুশ শান মহাসম্মানিত মাহফিল মুবারক-এ উপস্থিত হতেন। সুবহানাল্লাহ! সারা পৃথিবী থেকে এবং আমু দরিয়ার পিছন থেকে আলিম-উলামা, ফক্বীহ-মুফতী, ওয়ায়িয, ক্বারী, ছূফী-বুযূর্গ, ফক্বীর-ফুক্বারা, গরীব-গুরাবা এবং প্রত্যেক শ্রেণীর লোক উপস্থিত হতেন।” সুবহানাল্লাহ! (মিরআতুয যামান)
১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, যিনি পৃথিবীর ইতিহাসে সম্মানিত মুসলমান উনাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিতাব যাঁরা লিখেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত দু’খানা কিতাব “আল হাওই লিল ফাতাওই ফিল ফিক্বহি ওয়া ‘উলূমিত তাফসীরি ওয়াল হাদীছি ওয়াল উছুলি ওয়ান নাহওই ওয়াল ই’রাবি ওয়া সায়িরিল ফুনূন শরীফ” এবং “হুস্নুল মাক্বছিদ ফী ‘আমালিল মাওলিদ শরীফ” উনাদের মধ্যে বলেন-
“সর্বপ্রথম যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়ারহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক (রাষ্ট্রীয়ভাবে) পালনের আয়োজন করেন, তিনি হলেন ইরবিলের বাদশাহ মালিক মুযাফফর আবূ সাঈদ কূকূবুরী ইবনে যাইনুদ্দীন আলী ইবনে বাক্তাকীন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি মহামর্যাদাবান বাদশাহগণ উনাদের একজন এবং বিশ্বখ্যাত দানবীর ব্যক্তিবর্গ উনাদের অন্যতম। উনার রয়েছে অসংখ্য নেক কাজের নিদর্শন। তিনিই ক্বাসিউনের সুবিখ্যাত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ‘আল জামি‘উল মুযাফ্ফরী’ নির্মাণ করেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার (বিদায়া-নিহায়া) ইতিহাস গ্রন্থে বলেন যে, হযরত মালিক মুযাফ্ফার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়ারহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার ইন্তেযাম মুবারক করতেন। আর তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়ারহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক করতেন বিরাট আকারে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ, বীরপুরুষ, অত্যন্ত সাহসী, বুদ্ধিমান, আলিম এবং ইনসাফগার। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রতি সম্মানিত রহমত মুবারক বর্ষণ করুন এবং উনাকে সম্মানজনক বাসস্থান দান করুন। আমীন! (এরপর) তিনি বলেন, হযরত ইমাম আল্লামা হাফিযুল কাবীর আবুল খত্ত্বাব উমর ইবনে দিহ্ইয়াহ কালবী দানী সাব্তী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাদশাহ্ উনার আমলে উৎসাহ প্রদান করার উদ্দেশ্যে উনার জন্য ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ উনার উপর একখানা কিতাব রচনা করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি কিতাবখানার নামকরণ করেন ‘আত তানভীর বি মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর’। বাদশাহ এজন্য উনাকে এক হাজার দীনার (বর্তমানে তা প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা) হাদিয়া দেন। উনার রাজত্ব ছিল ইন্তেকাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল। তিনি আক্কা নগরীতে অবস্থানকালীন ক্রুসেডারদেরকে (খ্রিষ্টানদেরকে) ঘেরাও করে রেখে ছিলেন। ইতিহাসের সে মহান ব্যক্তিত্ব ৬৩০ হিজরী শরীফ সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন অতি উত্তম ও প্রশংসনীয় চরিত্রের অধিকারী। আর উনার মন-প্রাণ ছিল সর্বোত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (আল হাওই লিল ফাতাওই ফিল ফিক্বহি ওয়া ‘উলূমিত তাফসীরি ওয়াল হাদীছি ওয়াল উছুলি ওয়ান নাহওই ওয়াল ই’রাবি ওয়া সায়িরিল ফুনূন শরীফ ১/২২২, হুসনুল মাক্বছিদ ফী ‘আমালিল মাওলিদ ৩ পৃষ্ঠা, বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্ ১৩/১৬০)
১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত দু’খানা কিতাব “আল হাওই লিল ফাতাওই ফিল ফিক্বহি ওয়া ‘উলূমিত তাফসীরি ওয়াল হাদীছি ওয়াল উছুলি ওয়ান নাহওই ওয়াল ই’রাবি ওয়া সায়িরিল ফুনূন শরীফ” এবং “হুস্নুল মাক্বছিদ ফী ‘আমালিল মাওলিদ” উনাদের মধ্যে আরো বলেন-
আল্লামা ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৌহিত্র (শামসুদ্দীন আবূ মুযাফফার ইঊসুফ ইবনে ক্বিযঊগিলী ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি উনার লিখিত “মিরআতুয যামান” নামক কিতাবে বলেন, ইরবিলের বাদশাহ হযরত মালিক মুযাফ্ফার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্তৃক আয়োজিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়ারহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার এক প্রত্যক্ষদর্শী তিনি নিজে বর্ণনা করেছেন, তিনি নিজে গুণে দেখেছেন যে- ওই অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার ভূনা খাসি, দশ হাজার মুরগি, একশত (বন্য) ঘোড়া, এক লাখ খাবার ভর্তি গামলা, ত্রিশ হাজার হালুয়া বা মিষ্টান্নের ডিশ ছিল। তিনি আরো উল্লেখ করেছন যে, উনার ওই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়ারহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক উনার মধ্যে যুগ শ্রেষ্ঠ উলামায়ে কিরাম এবং ছূফী-বুজুর্গগণ উপস্থিত হতেন। উনাদের জন্য ঐ দিন (উনার দরবার) হতো উন্মুক্ত বাধা-বিপত্তিহীন। ছূফী-বুযূর্গ ব্যক্তিগণ উনাদের জন্য তিনি সম্মানিত সামা’ শরীফ তথা হামদ শরীফ ও সম্মানিত নাত শরীফ শুনার ও পাঠের বিশেষ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতেন। তা চলতো যোহর হতে ফযর পর্যন্ত। এতে তিনি নিজেও উনাদের সাথে অংশ গ্রহণ করতেন। তিনি প্রতি বৎসর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়ারহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক আয়োজনে তিন লক্ষ দীনার ব্যয় করতেন। সর্বপ্রান্ত হতে আগত, সর্বস্তরের মেহমানদের জন্য তিনি মেহমানখানাও নির্মাণ করেন। যার পরিচালনায় প্রতি বৎসর খরচ করতেন এক লক্ষ দীনার। প্রতি বৎসর পারস্যদের হাত থেকে বন্দীমুক্তিতে খরচ করতেন দু’লক্ষ দীনার। আর তিনি হারামাইন শারীফাইনের খিদমতে এবং (সেখানে অবস্থানকারী) উনাদের সুপেয় পানি সরবরাহে খরচ করতেন প্রতি বছর ত্রিশ হাজার দীনার। এগুলো উনার গোপন দান-খয়রাতের বাহিরে। (তাহলে তিনি গোপনে কি পরিমাণ দান-খয়রাত করতেন তা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ভালো জানেন। সুবহানাল্লাহ!) ইরবিলের বাদশাহ হযরত মালিক মুযাফ্ফার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা আহ্লিয়া হযরত রাবী‘য়াহ খাতুন বিনতে আইয়্যূব রহমতুল্লাহি আলাইহা যিনি সুলত্বান নাছির হযরত গাযী সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বোন, তিনি বলেন, হযরত মুযাফ্ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরিধানের জামাটি ছিল মোটা কিরবাসের, যা পাঁচ দেরহামেরও সমান হবে না অর্থাৎ পাঁচ দেরহামেরও কম মূল্যের। এ জন্য আমি উনাকে ব্যাতিক্রম কিছু কথা বলি। উত্তরে তিনি বলেন, পাঁচ দেরহাম তথা সস্তা দামের কাপড় ব্যবহার করে বাকি অর্থ (দীনার) দান করা, দামি কাপড় ব্যবহার করে ফক্বীর-মিসকীনদের বঞ্চিত করার চেয়ে অতি উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (আল হাওই লিল ফাতাওই ফিল ফিক্বহি ওয়া ‘উলূমিত তাফসীরি ওয়াল হাদীছি ওয়াল উছুলি ওয়ান নাহওই ওয়াল ই’রাবি ওয়া সায়িরিল ফুনূন শরীফ ১/২২২, হুসনুল মাক্বছিদ ফী ‘আমালিল মাওলিদ ৪ পৃষ্ঠা, বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্ ১৩/১৬০)
তারীখুল ইসলাম, শরহুয যারক্বানী, বিদায়া-নিহায়া, মিরআতুয যামান, আল হাওই, হুসনুল মাক্বছিদ, ‘ইয়ানাতুত ত্বালিবীন, ওয়াফাইয়াতুল আ’ইয়ানসহ পৃথিবীর বিশ্বখ্যাত কিতাবসমূহে এ বিষয়টি বর্ণিত রয়েছে যে,
كَانَ مُظَفَّرُ الدِّيْنِ صَاحِبُ اِرْبِلَ يُنْفِقُ فِـىْ كُلِّ سَنَةٍ عَلَى الْـمَوْلِدِ ثَلَاثَـمِائَةِ اَلْفِ دِيْنَارٍ
অর্থ: “ইরবিলের বাদশাহ হযরত মুযাফ্ফারুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি বছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উদযাপনে তিন লক্ষ দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) খরচ করতেন।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং ইরবিলের বাদশাহ হযরত মালিক মুযাফফার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি বছর ৩ লক্ষ দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা), যা বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৪ শত থেকে ৫ শত কোটি টাকা খরচ করে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর ইতিহাসে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই একমাত্র সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক, যিনি অনন্তকালের জন্য জারী করেছেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অত্যন্ত জাঁকজমক সাথে পৃথিবীর ইতিহাসে নজীর বিহীনভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফালইয়াফরহূ শরীফ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!